বিশ্বের একমাত্র হিন্দুদেশ হিমালয়ের কন্যা নেপাল

14/02/2013 21:56

হিমালয়ের কন্যা নেপাল। দুই দিকে দুই পরাশক্তি ভারত আর চীন দ্বারা বেষ্টিত এই দেশটি বর্তমানে এক ক্রান্তিকালীন সময় পার করছে। বিশ্বের এক সময়ের  একমাত্র হিন্দু এই রাষ্ট্রটি সাম্প্রতিক সময়ে তার রাষ্ট্রচরিত্র হিন্দুত্ব আর রাজতন্ত্রের কলঙ্ক মুছে নতুন এক রাষ্ট্র কাঠামোয় প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু আমাদের খুব কাছের প্রতিবেশী হওয়া সত্ত্বেও প্রচার মাধ্যমের অবহেলা সহ বিভিন্ন কারণে সাধারণ মানুষ তেমন একটা সচেতন নয়। যতটা সচেতন নেপালের নৈর্সগিক দিক সম্বন্ধে। অথচ আমাদের চেয়েও পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্র কাঠামো আর জনশক্তি নিয়ে নেপালের মানুষ তাদের ঘাড়ে চেপে বসা দুই’শ চল্লিশ বছরের রাজতন্ত্রের জোয়াল ভেঙ্গে যেভাবে বিশাল রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেই পরিবর্তনের ইতিহাস প্রতিটি মানুষের জন্য এক নতুন অনুপ্রেরণা।
এই পরিবর্তনের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে নেপালের ভৌগলিক, রাজনৈতিক, আর্থÑসামাজিক প্রেক্ষাপট এবং দীর্ঘ দশ বছর ধরে চলা জনযুদ্ধসহ প্রতিটি বিষয় সম্বন্ধে তত্ত্ব, তথ্য জানা জরুরী। এই প্রবন্ধে সামগ্রিকভাবে নেপালের সেই ইতিহাসটাকে তুলে ধরা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ নেপালের আয়তন এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার একশ একাশি বর্গ কি:মি এবং জনসংখা প্রায় তিন কোটি। এর মধ্যে হিন্দু ৮০.৬%, বৌদ্ধ ১০.৭%, মুসলিম ৪.২%, মনথুম ৩.৬% খ্রিস্টান ০.৫% এবং অন্যান্য ০.৪%। রাজনৈতিকভাবে নেপাল ১৭৬৮ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত  ছিল রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। ১৭৬৮ সালে গোর্খারাজ পৃথ্বীনারায়ণ শাহ্ কয়েক দশক যুদ্ধের কাঠমুন্ড সহ আশেপাশের ছোট বড় রাজ্য দখল করে সব রাজ্যকে একত্রিত করে একচ্ছত্রভাবে সমগ্র নেপালের রাজা হন তখন থেকে নেপালের রাজতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের বাংলা দখল পরবর্তী সমগ্র ভারতে দখল-বিস্তার শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায়  ১৮১৪ থেকে ১৬ সালে নেপালের  সীমান্তবর্তী রাজ্য দখলকে কেন্দ্র করে বৃটিশের সাথে নেপালের রাজশক্তির যুদ্ধ বাঁধে এবং এই যুদ্ধে নেপালের রাজশক্তি পরাজিত হয় ও কুখ্যাত ‘সুগৌলি চুক্তি’ স্বাক্ষর করে। যার ফলে সিকিম, কালী নদীর পশ্চিমে কুমায়ুন, গারোয়াল, শতদ্রু নদীর পশ্চিমে কাঙরা এবং তরাই অঞ্চলের অনেকখানি এলাকাসহ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভূখন্ড নেপালকে হারাতে হয়।পরবর্তীতে ১৮৪৬ সালে বৃটিশের সহযোগিতায় জং বাহাদুর রাণা ‘কট হত্যাকা’ নামক প্রাসাদ যুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। এর পর থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১০৪ বছর শাহ্ বংশ নামমাত্র রাজপরিবার থাকলেও মূল ক্ষমতা ছিল বৃটিশের অনুগত রাণা বংশের হাতে। পরবর্তীতে ১৯৫১ সালের ভারত এবং এরই মধ্যে তৈরী হওয়া রাজনৈতিক পার্টি নেপালী কংগ্রেসের (গঠিত হয় ১৯৪৭ সালে) সহযোগীতায় শাহ্ বংশের রাজা ত্রিভুন শাহ্ রাণাদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নেপালকে পরিচালিত করতে থাকে। ১৯৬২ সালে রাজা মহেন্দ্র সামরিক ক্যু’র মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে সব রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ও নির্দলীয় রাজতান্ত্রিক পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করেন এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই রাজপরিবারই বিভিন্নভাবে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের মাধ্যমে নেপালকে শাসন করে। মোদ্দাকথা ১৭৬৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন হাত বদল হলেও নেপালের শাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি ও শক্তি ছিল রাজতন্ত্র।
আর দীর্ঘ এই রাজতন্ত্রে শোষন নেপাল পরিনত হয় অনুন^ত ও পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্র। নেপালের মোট ৭৫ ঠা জেলার মধ্যে জেলার মধ্যে ২২টা জেলার সাথে কোনও পাকা সংযোগ সড়ক নেই, অথচ বিদাশী পর্যটকদেও জন্য পড়ে উঠেছে ৪৮টা এয়ারপোট। কৃষি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ও প্রবর্তিত হয় সামন্ত শোষন মূলক নিয়ম-কানুন। বিবতা, জাগির রাকম গুটি কিপতে ইত্যাদি নানা রকম ভূমি বন্ট ব্যবস্থায় রাজশক্তি ওতার অনুগত অভিজাত বর্গ আর সামীরক ও রাজ কর্মচারীরা বিপুল জমির মালিক বনে যায়, যেমন বিরতা আইনে রাজপরিবার ও ভিজাত বর্গ এবং জাগির আইনে সামরিক ও রাজকর্মচারীরা জমিদ খখলি স্বত্ব পায়। ১৯৫০ পরবর্তী ভূমি আইনের এদের যথাক্রমে ৫০ ও ৩৬ শতাং অর্থাৎ সর্বমোট ৮৬ শতাংশ জমি কুক্ষিগত হয়ে যায়। ১৯৬২ সালে ভূমি সংস্কারে উর্ধ্বসীমা নির্বীরন করা হলেও তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি নেপালের ৮৫.৮% মানুষ গ্রামে বাস করে এবং যার ৮০% কৃষির উপর নির্ভরশীল। অথচ তাদেও হাতে জমির পরিমান খুবই সামান্য। ২০০১-২০০২ জাতীয় স্যাম্পল সেন্সাস অনুসারে ৬০% পরিবার হাতে কোনও জমি নেই আর থাকলেও এত সামন্যেই যে তা দিয়ে পরিবার চালনো কঠিন।
 নেপারের রাজতন্ত্র আধিপত্যবাদী ভারতের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করায় ভারতের বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর সুবিধেির্থ নেপালের শিল্পোৎপাদনকে বিকশিত করেনি। ফলে নেপাল পরিনত হয় আমদ্যনি সিংহভাগ দখল কওে ভারত, ভারত থেকে নেপালের রপ্তাবী কার্পেট, ৫৩.৭% আর আমেরিকা অন্য সামন্যে কিছু পন্যেও মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মোট জাতীয় উৎপাদনে শিল্পের অবদান ও মাঝে ১০-১৫%।
এরকম দারিদ্র পীড়িত ও অবহেলিত নেপাল জনগনের জন্য মড়ার উপর খঁড়োর ঘায়ের মত একটা বিষফোড়া হচ্ছে নেপালী রাজকীয় সেনাবাহিনী খুবই আশ্চ হলেও সত্য জনসংখ্যার অনুপাতে নেপালের সেনাবাহিনী হচ্ছে এশিয়ার সবচেয়ে বড়। মাত্র ২কোটি ৮৩ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ১ লাখ নিয়মিত সেনা বাহিনী, ৭০ হাজার পুলিশবাহিনী ও ৪০ হাজার স্পেসলে আর্মস বাহিনী। যারা রাজার প্রতি মতভাগ আনুগত্যপূর্ণ, এই বাহিনীই হচ্ছে রাজতন্ত্রের শোষনের সবচেয়ে বড় ও শেষ হাতিয়ার।
এরকম শোষনমূলক আর্থÑ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নেপালের বর্তমানের রাজনৈতিক পরিবর্তনের অবস্থার বিশ্লেষণ করতে হলে একটু পেছন থেকে শুরু করতে হবে। মূলত বিংশ শতাদ্ধীর প্রথম দিক থেকেই রাণামহেরী রাজতন্ত্রে বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ দানা বাঁবতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিককতার বিংশ শতাদ্ধীর মাঝামাঝিতে নেপাল দুঠি রাজনেতিক দলের সৃষ্টি হয়। ১৯৪৭ সালের জানুয়ারী মাসে নেপালী কংগ্রেস নামে প্রথম রাজানৈতিক দল তৈরী হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন বিপি কৈরালভ নেপালী কংগ্রেসের ডাকে বিরাটনগওে শ্রমিকদেও ব্যাপক ধর্মঘট শুরু হয় ফওে বিপি কৈরালা ও মনমোহন অধিকারী গ্রেফতার হন। আর অপর গঠিত হয় ১৯৪৯ সালের ১৫ সেপ্টম্বও কলকাতায় পুষুনাল শ্রেষ্ঠ নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপার (সি পি এন)। এর মধ্যে ১৯৬০ সালে সাময়িক ক্যু মাধ্যমে রাজা মহেন্দ্র ক্ষমতা দখল করেন এবং সব ধরনেে রাজনৈতিক  কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে নির্দলীর পঞ্চয়েতি রাজ ব্যবস্থ রাজি করে। সিপি এন পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নেপালের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য করনীয় পন্থল নির্ধারনে তীব্র আন্তঃপার্টি বির্তক শুরু হয়। ১৯৭৪ সালে সিপি এন পার্টি ভেঙ্গে মোহন বিক্রম সিং এবং নির্মল লাসার নেতৃত্বে সিপি এন (চতুর্থ কনসেশন) পার্টি গঠিত হয়। কিন্তু এর মধ্যেও তীব্র মতপার্থক্য ছিল। অনেকে সরাসরি যুদ্ধের মাধ্যমে রাজতন্ত্রে উচ্ছেদেও লক্ষ্যে থখনি সশস্ত্র সংগ্রাম শুরুও পক্ষে ছিলেন আবার অনেক বিপক্ষে এর সংসদপন্ধী ছিল। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালে মোহন বিক্রম সিং এর নেতৃত্বে বিপ্লবী একটা অংশ বেরিয়ে এসে সি পি এন (মশাল) দল গঠন কওে যা দুই বছর পর ১৯৮৫ সালে আবার ভেঙ্গে মোহন বেদ্যও নেতৃত্বে সিপি এন (মশাল)। এত বার ভাঙ্গনের মধ্য দিয়ে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টিতে দুটি স্পষ্ট ধারা লক্ষ্য করা যায় একটি যারা সংসদপন্থী অপরটি সশস্ত্র বিপ্লবী।
১৯৬০ সাল থেকে সব ধরনের রাজনৈতিক নিষিদ্ধ থাকায় ও রাজতন্ত্রে শোষনের মাত্রা বাড়তে থাকার প্রেক্ষিতে ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে বেআইনী থাকা সব রাজনৈতিক দল পঞ্চায়েত বাতিলর দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তারা পঞ্চায়েত বাতিল করে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অন্তবর্তী মন্ত্রীসভা গঠন কওে অবার্ধ-সৃষ্ঠি নিবার্চনের দাবিতে রাজাকে ১৯৯০ সালে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়ে রাজতন্ত্র বিরোধী ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনে নেপালী কংগ্রেস নেতৃত্বে থেকে সাহসী ভূমিকা পালন করে। ১৯৯০ এর এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে নেপালের সংসদপন্থী কমিউনিস্ট সিপি এন (মার্কসবাদী-লেনিন বাদী) পার্টি অন্য আরো ছোট ছোট সাতটি কমিউনিস্ট পার্টিকে নিয়ে ১৯৯০ এর ১৫ জানুয়ারী সংযুক্ত বামফ্রন্ট (ইউ এল এফ) করে গড়ে তোলে। যার নেতৃত্বে ছিলেন মনমোহন অধিকারী।
১৮ জানুয়ারী থেকে শুরু হয় নেপালী কংগ্রেসের অধিবেশন যা ছিল ১০ বছরের মধ্যে ১ম কোন রাজনৈতিক দলের অধিবেশন। এই অধিবেশন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি মানিয়ে রাজাকে এক মাসের আলটিমেটাম দিয়ে নেপালী কংগ্রেস ও ইউনাইটেড লেফ্ট ফ্রন্ট এর যৌথ ভাবে পঞ্চয়েত বিরোধী গণআন্দোলন শুরু হয়। অপরদিকে ১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারী অনসন্য অধিকতর বিপ্লবী ও আপোষহীন কমিউনিস্ট দলগুলো সিপি এন (মশাল), সিপিএন (মশাল) ও নিয়ে গড়ে ওঠে সংযুক্ত জাতীয় গন আন্দোলন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পিপলস্ ফ্রন্ট। নেপালী কংগ্রেস ঠখঋ টঘচঅ এর তীব্র আন্দেলোন পুরো নেপালে অভূত পূর্ব গনজাগরনের সৃষ্টি হয়। এই প্রথম নেপাল জনগন রাজতন্ত্রে বিরুদ্বে রাস্তায় নেমে বিক্ষেভ প্রকাশ করে। ৫০ দিন ধরে চলা এই উত্তার গন আন্দোলনে গন অভ্যুথানে পারনত হয় এবং এপ্রিল মাসে সফলতা লাভ করে। রাজা জ্ঞানেন্দ্র পঞ্চায়েত প্রথার বিলুপ্ত ঘোষনা ও বহুদলীয় গনতন্ত্র পু: প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দিয়ে ঘঈ ও টখঋ  কে সমঝোতার আহবান জানান। টঘচঅ রাজার সমঝোতার ঘোষনাকে প্রত্যাখান কওে নতুন সংবিধান প্রনয়নের জন্য সংবিধান পরিষদেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানায়। কিন্তু ঘঈ ও টখঋ রাজার সাথে গোপনে সমঝোতা করে রাজপরিবার ওতাদেও মনোনীত প্রার্থী নিয়ে কমিটি করে তাদেও মত কওে সংবিধান প্রনয়নের পদক্ষেপ নেয়ে আর সবচেয়ে দূরাভিসন্কিমূলক যে বিষয়টি এই পুরো প্রক্রিয়া থেকে টঘচঅ কে বাদ রাখা হয়। এরই ধারাবা (হকতায়) ১৯৯১ এর এপ্রিলে লেপারের ইতিহাসে সাধারণ নিবার্চ অনুষ্ঠানের ঘোষনা দেওয়া হয়।
যা হোক অভ্যুত্থানের ফলে পঞ্চায়েত বিলুপ্ত হয় এবং রাজতন্ত্রে অধীনে বহুদলীয় গণতান্ত্রি ব্যবস্থ জারি হয়। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে রাজতন্ত্র ঔচ্ছেদ হয় না। এপ্রিল এই নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েকটি কমিউনিষ্ট পাটিÑ নির্বল লামার নেতৃত্বে সিপিএন (চতুথ কনভেশন), প্রচন্ড এর সেতৃত্বে সি পি এন (মশাল) এবং ড.বাবুরাম ভট্টরাই এর নেতৃত্বে সিপি এন (মাশার) পার্টি একত্রে সি পি এন (ঐক্য কেন্দ্র) গড়ে তোলা। সি পি এন (ঐক্য কেন্দ্র) এর নেতারা মূল দলকে গোপন রেখে প্রকাশ রাজনীতিতে ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া জন্য ড. বাবুরাম ভট্টরাই এর সেতৃত্বে রাজনৈতিক সংগটন হিসাবে সংযুক্ত গণফ্রন্ট (ইউনাইটেড পিপলস ফ্রন্ট) ইউ পি এফ এন গঠন করে।
১৯৯১ এর সাধারণ নির্বাচনে নেপালী কংগ্রেস ১১০ আসনে জিতে প্রথম, সিপিন (ইউ এম এল) ৬৯ আসনে জিতে ২য় ও ইউ পি এফ এন তৃতীয় দল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, নেপালী কংগ্রেসের প্রধান গিরিজা প্রসাদ কৈরাল প্রধানমন্ত্রী নির্বচিত হন।
রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অথীনে নেপালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন সাধিত হলেও দেশের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনে যে াাশা নিয়ে নেপালের জনগণ গণ অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল তার তেমন কোন বড় পরিবর্তন হয় না। তখন ধনিক উচ্চ বর্গেও হিন্দু ও সুদখোর মহাজন গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষমতা ও প্রভাব ভোগ করত। বিভিন্ন দলিত ও উজাতি আধ্যুষিত অঞ্চরের লোকদের  শাসন কাঠামোতে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। হিন্দু নারীদেও উত্তরাধিকারের সম্পত্তি প্রাপ্যতার বিষয়ে সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবহেলিত রয়ে যয়ি। অপর দিকে সি পি এন (ঐক্য কেন্দ্র) নির্বাচনে অংশ নিরের তারা বস্তুপক্ষে পূর্ণ রাজতন্ত্রের ঔচ্ছেদেও দাবিতে ছিল অনড়। এরকম ১৯৯৪ সালের জুলই মাসে দলত্যাগী কংগ্রেস এম পি দেও সরকারবিরোধী পক্ষে ভোট দেওয়ার আস্থা ভেটে প্রধানমন্ত্রী কৈরাল পরাজিত হন এবং রাজার কাছে প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করে। নভেম্বরে সি পি এন (টগখ) পকপল সনপসভরন অধিকারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরকম ----রাজনৈতিক প্রেক্ষাপঠে ১৯৯৯৫ সালের মার্চ মাসে সি পি এন এক্যকেন্দ্রেয় কমিটির বর্ধিত সভায় দেশের রাজতন্ত্রেও শোষণ ঔচ্ছেদ কওে নয়া গাতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে সি পি এন (মাওবাদী) পার্টি গঠিত হয়। পার্টি কমরেড মাও সে তু॥য়ের দীর্ঘত্থী জনযুদ্ধেও তত্ত্বমতকে রাজনিৈতক লাইন হিসাবে গ্রহন কওে পুরষ্কার প্রচন্ডের নেতৃত্বে দেশবাপী রাজতন্ত্রেও বিরুদ্ধে জনযুদ্ধ শুরুও পরিকল্পনা গ্রহণ করে। জনযুদ্ধ শুরুও পূর্বমূহুর্তে নেপালের অবস্থ কি ছির তা নেপালের রলপা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চরের এক স্কুল শিক্ষকের কথা থেকেই জানা যায়Ñ পৃ: ১৫৩
এরই মধ্যে ১৯৯৫ সালের নভেম্বও মাসে সরকার মাতবাদীদেও শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিতি রলপা জেলাতে মাওবাদী পার্টিকে নির্মূল করতে অপারেশন রোমিও নামে পুলিশী অভিযান শুরু করে। ফলশ্র“তিতে ১৯৯৬ সালের ৪ ফেব্র“য়ারী সংসদে থাকা মাওবাদী পার্টিও প্রকাশ্য ফ্রন্ট টচঋঘ এর ৯ জন সংসদ  সাধারণ মানুষের জাতীয়তা। গণতন্ত্র ও জীবন-জীবিকার সমস্যার ভিত্তিতে ৪০ দফা দাবিনামার এক স্মারকলিপি ড. ।ট্টরাই ও পুঙ্গা যোষালের নেতৃত্বে সরকারের কাছে পেশ কওে এবং ১৩ ই ফেব্র“য়ারীর মধ্যে দাবি মানা না হলে তারা সংসদ পদ থেকে অব্যহিতি দিয়ে পার্টিও সাথে জনযুদ্ধ শুরুর হুশিয়ারী জানান। কিন্তু সরকার এই দাবির প্রতি কোন ভ্রক্ষেপই কওে না। ফলে ১৩ ই ফেব্র“য়ারী এক মহাবিত্থোরণে কেঁপে উঠল নেপাল। শুরু হল জনযুদ্ধ। নেপালের জনযুদ্ধ শুরু করার বিষয়ে কমরেও অনন্ত বলেছেনÑ পৃ: ৬৮
‘‘রাজনৈতিক প্রতিক্রিযাশীল রাষ্ট্র ধ্বংস করে নায়গণতান্ত্রি রাষ্ট্র জন্য জনযুদ্ধের পথে সামনে এগিয়ে চলুন। এই শ্লোগান নিয়ে মাওবাদী পার্টিও ডাকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে নেপালের হাজার হাজার মানুষ ঝাপিয়ে পড়ে। প্রচন্ড ড. ভট্টরাই ও কিরা বৈদ্য এই এয়ীর নেতৃত্বে এই জনযুদ্ধ দেশের লক্ষাধিক মেধাবী ও তরুণদের এই সংগ্রামে টেনে নিয়ে আসে। দীর্ঘ ১০ বছরের এই জনযুদ্ধে দেশের প্রায় ৭০% এলাকা মাওবাদীকের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এই নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র অস্ত্রেও ভিািত্ত সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্র ছিল না, মূলত সমগ্র জনগণকে সাথে নিয়ে তারা নেপালের রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর বিপরীতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অনুরূর বিশাল গণ স্বায়ওশাসিত আঞ্চলিক গণসরকার প্রতিষ্ঠা করে। ২০০৪ সালে ড. ভট্টরাই এর নেতৃত্বে যে ৭ টি আঞ্চলিক গণসরকার গঠিত হয় সেগুলি ছিল –পৃ: ১২,১৩.
বিশাল এ জনযুদ্ধ নেপাল সামগ্রিক গণসংস্কৃতির উপর বিরাট প্রভাব ফেলে। মাভবাদী পার্টিও সশস্ত্রবাহিনী চখঅ  যা গঠিত হয়Ñসালে, সেখানে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মহিলা ছিল চখঅ  নিয়ে আন্তর্জাতিক  ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক রোসান কিশানের মন্তব্যেও মধ্যেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়- পৃ-১৫৭
এর মধ্যে ২০০১ সালে ১লা জুন নারায়ণ হিতির হনুমান ধোকা রাজ প্রসাদ হত্যাকান্ড সংগঠিত যুবরাজ দীপেন্দ্র গুলি চালিয়ে হত্যা করেন নিজ বাবা বীরেন্দ্র, মা রানী ঐশ্বর্য ও বোন শ্রতিকে এবং পওে নিজেই আত্মহত্যা কওে কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে রাজা বীরেন্দ্রে ভাই জ্ঞানেন্দ্র অক্ষত থেকে যান।এই ঘটনার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটি যুবরাজ দীপেন্দ্রকে দায়ী করেন হত্যাকান্ডের জন্য। সমত্ত বিদেশী পক্ষ এই রিপোর্ট গ্রহণ করলেও নেপালের অধিকাংশ জনগণই বিশ্বাস করে নি, মূলত এই হত্যাকান্ডে মধ্যে বিরাট বড়  ষড়যন্ত্র ছিল যার প্রমাণ আমরা ভবিষ্যতে দেখেতে পাই এ প্রসঙ্গে ড. বাবুরাম ভট্টরাই বলেন-‘‘রাজপ্রাসাদের এই হত্যাকান্ডে রাজতন্ত্রে র্দীঘ ঐতিহ্যে সম্মনিত ও পূজিত এবং জনগণের প্রিয় রাজা বীরেন্দ্রকে হত্যা করে রাজাতন্ত্রে কট্টরপন্থী অংশ বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী ও সম্পসারণবাদী শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে ক্ষমতা দখল করে.... এটা ছিল মাওবাদীদের ক্রমবর্ধিষ্ণু শক্তির বিরুদ্ধে একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। প্রধানমন্ত্রী কৈরালা রয়াল নেপাল আর্মির  সুপ্রিম কমান্ডার হিসেবে রাজা বীরেন্দ্রকে মাওবাদীদেও বিরুদ্ধে বড় আকারের সেনা অভিযান চালানোর জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু রাজা এ প্রস্তাবে রাজি হন নাই। ফলে বিদেশী শক্তিকে নিয়ে এ ষড়যন্ত্র আটা হয়।’’  
যা হোক মাওবাদীদের এই জনযুদ্ধের ফলে নেপালের রাজতান্ত্রিক কাঠামো বাস্তবে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে। এরকম প্রেক্ষিতে ২০০৫ সালের ৮ মে নেপালী কংগ্রেস ..............................এই ৭টি দল নেপাল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য শান্তিপূর্ন আন্দোলনের নিমিত্তে সাত দলীয় জোট এস. পি .এ গঠন করে। ৩রা সেপ্টেম্বর মাওবাদীরা তিনমাসের যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করে। অক্টোবরে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির চুনবাঙ বৈঠকে সাতদলীয় জোটের সাথে যৌথ আন্দোলনের সিন্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ২২ নভেম্বর ঐতিহাসিক ১২ দফা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১লা ডিসেম্বর যুদ্ধবিরতি চলাকালীন নেপাল আর্মি বিনা উসকানিতে চখঅ  এর ডিভিশনাল কমান্ডার কম.কিম বাহাদুর থাপাকে হেলিকপ্টার থেকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এর উদ্দেশ্য ছিল মাওবাদী পার্টি যাতে আবার যুদ্ধে ফিরে যায়। কিন্তু পার্টি সরকারের মনোভাব বুঝতে পেরে যুদ্ধ বিরতির মেয়াদ আরো একমাস বাড়িয়ে দিয়ে রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়। এরই মধ্যে ২০০৬ সালের ১৩ই ফেব্র“য়ারী জনযুদ্ধের ১০ম বার্ষিকী পূর্ণ হয়।
৬ এপ্রিল সি পি এন (এম) ও সাতদলীয় জোট যৌথ ভাবে সাধারণ ধর্মঘট ডাকে। যার উদ্দেশ্য ছিল রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে নেপালকে একটি ফেডারেল প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য সংবিধান পরিষদের  নির্বাচন আহ্বান করা। এপ্রিলে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। মাওবাদীদের নেতৃত্বে দীর্ঘ এই জনযুদ্ধ যে মানুষের মুক্তির আকাক্সক্ষার বহি:প্রকাশ তা প্রমাণ হয় ১৯ দিনের এই সফল গণঅভ্যুত্থানে। সফল এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজা জ্ঞানেন্দ্র বাধ্য হন প্রতিনিধি পরিষধ পুন: প্রতিষ্ঠা করতে। মাওবাদী পার্টি প্রথম থেকেই দাবি ছিল রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ও ফেডারেল প্রজাতান্ত্রিক নেপাল প্রতিষ্ঠা করা। ফলে তারা ২০০৬ সালের ২১ নভেম্বর (ঈচঅ) স্বাক্ষর কার আনুষ্ঠনিক ভাবে সমন্ত যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করে।
এর পওে বিভিন্ন চড়াই উৎবাইরের মধ্য দিয়ে ২০০৭ সালের ১৫ ই জানুয়ারী রাজতন্ত্রেও আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি হয় এবং ২০০৮ সালের ১০ এপ্রিল সংবিধান পরিষদেও নির্বচন আনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া হয়, এবং সিদ্ধান্ত হয় যে এই সংবিধান পরিষদের প্রথম অধিবেশনেই নেপালকে একটি ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
১০ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত এই নেপাল। প্রতিশ্র“তির প্রতি জনগণের আস্থার প্রতিফলন ঘটে। ৬১০ আসনের মধ্যে ২২০ আসন জিতে াাওবাদী পার্টি সর্ববৃহৎ সংখ্যাগরিষ্ঠাতা অজূন করে, ঘঈ ১১০ আসন ও ঈচঅ (টগখ) ১০৩ আসনে জয়লাভ করে। এবং ২৮ মে সংবিধান পরিষদের প্রথম অধিবেশনেই নেপালকে ফেডারেল প্রজাতএন্ত্র হিসেবে ঘেষিণা করা হয়। বর্তমানে নির্বচিত সংবিধান পরিষদ নেপালের জন্য একটি গণমুখী সংবিধান প্রণয়নের চেষ্টা করছে। এখানেও মাওবাদী পার্টি ফেডারেল গণপ্রজাতান্ত্রিক নেপালের অন্তর্বর্তী সংবিধান তৈরি করে কমিটির কাছে পেশ করেছে এবং তারা হাজার হাজার কপি জনগণের মধ্যে বিতরণ করেছেন।
পরিশেষ বলতে হয় নেপালের জনগন বর্তমানে রাজতন্ত্রের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত। এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল জনযুদ্ধ ও মাওবাদী পার্টির । কিন্তু কাজ এখনো শেষ হয়নি। সম্পূর্ণভাবে সাম্যের একটি রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে মাওবাদী পার্টি এখনো কাজ করে চলছে। সেই প্রক্রিয়া সফল হলে আমরা হয়ত ভবিষ্যতে নতুন একটি নেপাল দেখতে পাব। সবশেষে রোশনের ঐ কথাটি দিয়ে শেষে করছিÑ‘‘ কাঠমন্ডুতে অমি যখনই কোন উচ্চ শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত ও ইংরেজি জানা ভদ্রলোকদের সাথে কথা বলি, আমি দেখি তাদের আগ্রহ পশ্চিমে কভিাবে যাওয়া সম্ভব, তারা নেপালের কোন উজ্জল ভবিষ্য সামনে দেখে না।কিন্তু, সকল পিএলএ সদস্য নেপালকে ঘিরেই তাদের ভালো-মন্দ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে, তারা কেউ বিদেশের মাটিতে যেতে আগ্রহী নয়। তাই তাদেরকে আমি অন্তও থেকে সম্মান না করে পারি না।’’